সেন্সর কি? সেন্সর এর প্রকারভেদ ও ব্যাবহারক্ষেত্র
সেন্সর কোন যন্ত্রের এমন একটি অংশ যা পরিবেশ এর বিভিন্ন পরিবর্তন এর সাথে সংবেদনশীল হয় এবং ঐ যন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় ইনপুট দিতে পারে। ইনপুট হিসেবে যেকোন পরিবর্তন হতে পারে, যেমন: আলো, তাপ, চাপ, নড়াচড়া ইত্যাদির পরিবর্তন।
Tanvir Hossain
Writer
PUBLISHED ONMar 08, 2024
আমাদের পাচটি ইন্দ্রীয় অনবরত ব্রেইনে সিগন্যাল দিচ্ছে শরীর এর আশেপাশের বিভিন্ন পরীবর্তন এর জন্য। আবার আমরা যখনই কোন অটোমেটেড ডিভাইস নিয়ে কাজ করতে চাই, তখন ঐ ডিভাইসটির আশপাশ এর পরিবেশ এর বিভিন্ন পরিবর্তন ডিভাইসটিকে ইনপুট হিসেবে নিয়ে আউটপুট দিতে হয়। তবে এই কাজ গুলো করার জন্য আমরা ইনপুট নিবো কিভাবে? রোবট বা অটোমেটেড কোন ডিভাইস এর তো মানুষের মতো পঞ্চইন্দ্রিয় নেই! এই জায়গায় আসে সেন্সর এর কথা। তাহলে,
সেন্সর কি?
এটি কোন যন্ত্রের এমন একটি অংশ যা পরিবেশ এর বিভিন্ন পরিবর্তন এর সাথে সংবেদনশীল হয় এবং ঐ যন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় ইনপুট দিতে পারে। ইনপুট হিসেবে যেকোন পরিবর্তন হতে পারে, যেমন: আলো, তাপ, চাপ, নড়াচড়া ইত্যাদির পরিবর্তন।
Buy sensor from here
সেন্সর কিভাবে কাজ করে
আগেই বলেছি সেন্সর কাজ করে তার আশেপাশের যেকোন পরিবর্তন থেকে। সেন্সর ভেদে পরিবেশ এর অবস্থার পরিবর্তন বুঝতে পারার ধরন ও ভিন্ন হয়। এই পরিবর্তনে যেহেতু সেন্সর সংবেদনশীল তাই সেন্সর প্রাপ্ত এই সিগন্যালকে বুঝতে পারে। এই সিগন্যালকে সে প্রসেস করে এবং একটি ইলেকট্রিক সিগন্যালে রূপ দেয়। এই ইলেক্ট্রিক সিগন্যাল প্রধান ডিভাইসে যায় যা ইনপুট হিসেবে এই সিগন্যালকে নেয় এবং আগে দেয়া নির্দেশনা মোতাবেক আউটপুট হিসেবে কোন পরিবর্তন আনে। নিচে একটি
আল্ট্রাসনিক সেন্সর কিভাবে কাজ করে এর একটি প্রবাহ চিত্র দেয়া হলো।
বিভিন্ন ধরনের সেন্সর এবং এদের ব্যাবহার
সব ধরনের সেন্সর প্রায় একই নিয়মে কাজ করলেও এদের যেহেতু সংবেদনশীলতা একে অপরের থেকে আলাদা তাই এদের ব্যাবহার ক্ষেত্রেও ভিন্নতা রয়েছে।
প্রক্সিমিটি সেন্সর
এই ধরনের সেন্সর তার আশেপাশে থাকা কোন বস্তু বা প্রানীকে স্পর্শ না করে শনাক্ত করতে পারে। যখন কোন প্রানী প্রক্সিমিটি সেন্সর এর সংবেদনক্ষমতা এলাকায় আসে তখনি প্রক্সিমিটি সেন্সর তা শনাক্ত করতে পারে। প্রক্সিমিটি সেন্সর এর কিছু ধরন রয়েছে। যেমন : ক্যাপাসিটিভ, ইনডাকটিভ, ম্যাগনেটিক, অপটিক্যাল, আল্ট্রাসনিক প্রক্সিমিটি সেন্সর। বিভিন্ন কলকারখানাতে এদের ব্যাবহার চোখে পরার মতো। ক্যাপাসিটিভ প্রক্সিমিটি সেন্সর কনভেয়ার বেল্টে বা কর্মক্ষেত্রে কোন জিনিস এর অবস্থান শনাক্ত করে গননা করতে পারে। ইনডাকটিভ প্রক্সিমিটি সেনসর লোহাজাতীয় পদার্থ শনাক্ত করতে পারে। ম্যাগনেটিক প্রক্সিমিটি সেন্সর মূলত খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনকারী কারখানায় ব্যাবহার করা হয়। অপটিক্যাল প্রক্সিমিটি সেন্সর দিয়ে কোন তরল এর অবস্থান এবং পরিমান শনাক্ত করা যায়। আল্ট্রাসনিক প্রক্সিমিটি সেন্সর দিয়ে প্রায় উপরের সব কাজগুলোই করা যায়।
টেম্পারেচার সেন্সর
নাম কারনে সহজেই এই সেন্সর এর কাজ এর ধরন সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। টেম্পারেচার সেন্সর দিয়ে কোন স্থান এর তাপমাত্রা মাপা যায়। টেম্পারেচার সেন্সর থাকে ফ্রিজ, ইলেক্ট্রিক কেতলি, টোস্টার, ওয়াশিং মেশিন, কফি মেশিন, ডিশ ওয়াশার ইত্যাদিতে। টেম্পারেচার সেন্সর করেক ধরনের হয়ে থাকে। থার্মোস্টেটস, থার্মিস্টর, আরটিডি( RTD), থার্মোকাপলস ইত্যাদি।
অ্যাক্সেলেরোমিটার সেন্সর
এই সেন্সর কোন নড়াচড়া করতে পারে বা করবে এমন স্থানে স্থাপন করা হয়। কারন এই সেন্সর অবস্থানের পরিবর্তন শনাক্ত করতে পারে। অর্থাৎ কোন ত্বরন এর উদ্ভব হলে তা শনাক্ত করার এর কাজ। একটা উদাহরন দেয়া যাক। আমাদের হাত থেকে যদি কখনো ল্যাপটপ পরে যায় তবে অ্যাক্সেলেরোমিটার সেন্সর তা শনাক্ত করে এবং সাথে সাথেই ল্যাপটপ এ থাকা হার্ডড্রাইভ এর কানেকশন অফ করে দেয় যাতে ল্যাপটপ এর কোন ক্ষতি হলেও হার্ডড্রাইভ এর কোন সমস্যা না হয়। তাছাড়াও ফিটনেস ট্র্যাকার, গেম কন্ট্রোলার ইত্যাদিতে অ্যাক্সেলেরোমিটার সেন্সর ব্যাবহার করা হয়
আল্ট্রাসাউন্ড সেন্সর
চিকিৎসা বিজ্ঞান এর উন্নতিতে অবদান রাখা একটি সেন্সর যার ব্যাবহারক্ষেত্র বিস্তৃত। আল্ট্রাসাউন্ড সেন্সর শব্দ উৎপন্ন করতে পারে এবং তা প্রবাহ করার মাধ্যমে কোন স্থান এর ছবি তৈরি করতে পারে। আমাদের শরীর এর ভিতর এর কোন অংশের নিখুত ছবিও এই আল্টাসাউন্ড সেন্সর দিয়ে তৈরি করা যায়।
ইনফ্রারেড সেন্সর
IR সেন্সর বা ইনফ্রারেড সেন্সর ইনফ্রারেড রেডিয়েশন শনাক্ত করতে পারে। ইনফ্রারেড সেন্সর ব্যাবহার করে থার্মাল ইমেজ তৈরি করা যায় যা দ্বারা দূরে থাকা কোন বস্তর তাপমাত্রা মাপা যায়৷ তাছাড়া ফাইবার অপটিক ক্যাবল, হোম সিকিউরিটি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ও ইনফ্রারেড সেন্সর ব্যাবহার করা হয়।
অপটিক্যাল সেন্সর
আলোর তরঙ্গ শনাক্ত করতে পারে এ অপটিক্যাল সেন্সর, এবং এর সিগন্যালকে ইলেট্রিক সিগন্যালে রুপান্তর করার মাধ্যমে এ সেন্সর কাজ করে। কম্পিউটার, ফটোকপি মেশিন এবং বাড়ির নিরাপত্তা ব্যাবস্থার জন্য অপটিক্যাল সেন্সর ব্যাবহার করা হয়।
হল সেন্সর
হল সেন্সর মূলত ব্যাবহার করা হয় কোন বস্তর অবস্থান, গতী ইত্যাদি শনাক্তকরনে। তাছাড়াও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফ্যাসিলিটি, অটোমেটিভ কলকারখানা ও বিভিন্ন কমার্শিয়াল ব্যাবসায় হল সেন্সর ব্যাবহার করা হয়।
টাচ সেন্সর
এই সেন্সর এর সাথে আমিরা সকলেই পরিচিত। আমাদের সকলের দৈনন্দিন জীবনের ব্যাবহার্য একটি যন্ত্র মোবাইলফোন এবং এই মোবাইল ফোনের ডিস্প্লে হয় টাচ বা স্পর্শের প্রতি সংবেদনশীল। তাছাড়াও কোন প্রতিষ্ঠান এর নিরাপত্তার জন্য এই টাচ সেন্সর এর ব্যাবহার করা হয় যা কর্মরতদের শনাক্ত করতে পারে।
চাপ শনাক্তকরন সেন্সর
প্রেশার বা চাপ শনাক্ত করতে পারে এ ধরনের সেন্সর। প্রেশার সেন্সর প্রধানত ব্যাবহার করা হয় কলকারখানায় কোন যন্ত্রের নির্দিষ্ট বা সম্পুর্ণ অংশের চাপ মনিটরিং করার জন্য। ফুয়েল পাম্প গুলোতেও এ ধরনের সেন্সর ব্যাবহার করা হয়। তাছাড়া কফি মেশিন, ফ্রিজে প্রেশার সেন্সর ব্যাবহার করে এদের ভিতরের প্রেশার বা চাপকে কন্ট্রোল করা হয়ে থাকে।
হিউমিডিটি সেন্সর
আবহাওয়া স্টেশন, এয়ার কন্ডিশন, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, রেফ্রিজারেটর, ওভেন, ওয়াশিং মেশিন হচ্ছে হিউমিডিটি সেন্সর এর প্রধান ব্যাবহার ক্ষেত্রসমূহ। এই সেন্সর পরিবেশ এর বাতাস আর বিভিন্ন উপাদান শনাক্ত করে হিসাব-নিকাশ করে পরিবেশ এর আদ্রতা মাপতে পারে।
জাইরোস্কোপ সেন্সর
জাইরো সেন্সর কৌনিক গতিশক্তি শনাক্ত করতে পারে। ড্রোন হচ্ছে জাইরোস্কোপ সেন্সর ব্যাবহার এর একটি উত্তম উদাহরন। তাছাড়াও ডিজিটাল ক্যামেরা, গেমিং কন্সোল, গাড়ির ন্যাভিগেশন সিস্টেম ইত্যাদি কাজে জাইরোস্কোপ সেন্সর ব্যাবহার করা হয়।
তআছাড়াও বিভিন্ন ছোট ছোট কাজ বা প্রয়োজনে এক বা একাধিক সেন্সর একসাথে কাজ করানো হয়।
Share
More Blog Articles
Mar 04, 2024
রোবট এবং রোবটিক্স : বিস্ময়কর এক যান্ত্রিক রাজ্য
রোবটিক্স যদিও একটি শব্দ, কিন্ত কখনো কি চিন্তা করেছেন ছোট একটি শব্দে কত বিশাল একটি যান্ত্রিক পৃথিবী লুকিয়ে আছে! রোবটিক্স শব্দটি শোনলেই আমাদের মনের ভেতর একটা অন্য রকম অনুভূতি তৈরি হয়।
READ MORE
Mar 03, 2024
মডেম এর আদ্যোপান্ত
মডেম এর প্রধান কাজ তথ্য কে ডিজিটাল ও এনালগ সিগনাল এ রুপান্তর করা। এরা একই সাথে মডুলেশন এবং ডিমডুলেশন করতে পারে। মডেম মূলত একই সাথে বিভিন্ন চ্যানেল এ যুক্ত ডিভাইস সমূহে তথ্য প্রেরন করতে পারে।
READ MORE
Mar 05, 2024
ডায়োড : ডিজিটাল প্রযুক্তির ভিত্তি
ডায়োড মূলত ছোট আকারের বৈদ্যুতিক একটি যন্ত্র। এদের ব্যাবহার করা হয় বিপরীতমুখী তড়িৎ প্রবাহ রোধ এর জন্য। ডায়োড এর একপ্রান্ত নিম্ন রোধ ও অন্য প্রান্ত উচ্চ রোধ বিশিষ্ট হয়।
READ MORE