রোবট এবং রোবটিক্স : বিস্ময়কর এক যান্ত্রিক রাজ্য
রোবটিক্স যদিও একটি শব্দ, কিন্ত কখনো কি চিন্তা করেছেন ছোট একটি শব্দে কত বিশাল একটি যান্ত্রিক পৃথিবী লুকিয়ে আছে! রোবটিক্স শব্দটি শোনলেই আমাদের মনের ভেতর একটা অন্য রকম অনুভূতি তৈরি হয়।
Tanvir Hossain
Writer
PUBLISHED ONMar 04, 2024
রোবোটিক্স আসলে কি? রোবটিক্স যদিও একটি শব্দ, কিন্ত কখনো কি চিন্তা করেছেন ছোট একটি শব্দে কত বিশাল একটি যান্ত্রিক পৃথিবী লুকিয়ে আছে! রোবটিক্স শব্দটি শোনলেই আমাদের মনের ভেতর একটা অন্য রকম অনুভূতি তৈরি হয়। আপনি যে স্তর এর যেকোন বয়স এর মানুষই হোন না কেন, রোবটিক্স আপনার জীবনের সাথে ওতপ্রতভাবে জড়িয়ে আছে। ভাবছেন, কিভাবে? চলুন এই লেখার মাধ্যমে জানার চেষ্টা করি। তবে তার আগে রোবটিক্স এর ইতিহাস জেনে নেয়া যাক।
রোবটিক্স কি?
প্রযুক্তির একটি স্বতন্ত্র শাখা রোবটিক্স। এই শাখায় রোবটের ডিজাইন, তৈরি প্রক্রিয়া, কার্যক্রম এবং এর প্রয়োগ নিয়ে কাজ করা হয়। রোবট শব্দের আক্ষরিক অর্থ মানুষের দাসত্ব করার মতো যন্ত্র। সহজভাবে বললে মানুষের জন্য কষ্টসাধ্য কাজকে কোন যন্ত্রের মাধ্যমে করিয়ে নেয়ার যন্ত্রই হলো রোবট।এই যান্ত্রিক ব্যাবস্থার আবিস্কার যেমন হয়েছে মানব সভ্যতার হাত ধরে, তেমনি এর নিয়ন্ত্রক ও হয় মানুষ। আর এই যান্ত্রিক ব্যাবস্থার উন্নতিকরন এর জন্য যে শাখায় আলোচনা করা হয় তা হলো রোবটিক্স।
রোবটিক্স এর অতিত থেকে বর্তমান
রোবটিক্স এর আবির্ভাব নিয়ে নানা মতপার্থক্য থাকলেও এর ব্যাবহার অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে বলে ধারনা। মানুষ তার প্রয়োজনে বিভিন্ন স্বয়ংক্রিয় ব্যাবস্থার সাথে পরিচিত ছিলো সেই আদিকাল থেকেই। তবে গ্রীক গণিতবিদ "আর্কিটাস" একটি বাষ্পচালিত পাখি তৈরি করেছিলেন যার নাম ছিলো "পিয়েগন"। সেই থেকে শুরু করে মানুষ তার প্রয়োজনে বিভিন্ন স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের ব্যাবহার করেছে। তবে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে প্রথম রোবট তৈরি করেছিলেন " জর্জ ডিবল" ১৯৫৪ সালে, যার নাম দেয়া হয়েছিলো "ইউনিমেট" আর এই কারনে তাকে বলা হয় আধুনিক রোবটিক্স এর জনক। এই "ইউনিমেট" রোবট ছিলো প্রথম ব্যাবহকৃত ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবোট। তারপর আর এই পথচলা থামেনি বরং মানুষ এই প্রযুক্তির উন্নতি করেছে। মানুষ রোবটকে পরিবেশ এর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম করেছে, নিজের বুদ্ধিমত্বা দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে শিখিয়েছে। এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্বার বদৌলতে রোবটিক্সের প্রসার ঘটেছে বহু দূর।
রোবটিক্স এর ব্যাবহার
এই লিখার শুরুতেই বলা হয়েছিলো আমাদের জীবনের সাথে রোবটিক্স বা রোবট, এই দুটি ব্যাপার ই ওতপ্রতভাবে জড়িত। চলুন জেনে নেয়া যাক এর ব্যাবহার ক্ষেত্র সমূহ।
- স্বাস্থ সুরক্ষা : সার্জিক্যাল রোবট, টেলিমেডিসিন রোবট এবং ল্যাব কাজে ব্যবহৃত রোবট হলো স্বাস্থ বিজ্ঞানে ব্যাবহৃত রোবট এর উদাহরন। এখন অনেক অপারেশন সফলভাবে করা হয় এ রোবট গুলোর মাধ্যমে।
- ম্যাকানিক্যাল ক্ষেত্রে : ভারী শিল্প বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাজে রোবটের ব্যাবহার লক্ষনীয়। হাতের মোবাইল বা ঘড়ি থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি জায়গায় এদের ম্যানুফেকচারিং এ রোবট ব্যাবহার হয়।
- ন্যানো-টেকনিক্যাল কাজ : সুক্ষভাবে নিখুত কাজ করার জন্য রোবট ব্যাবহার করা হয়।
- আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিনেন্স : রোবটিক্স এর ব্যাবহার বর্তমানে সবচেয়ে বেশি লক্ষনীয় এই ক্ষেত্রে। রোবটের পরিবেশ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান নিয়ে নিজে নিজে কাজ করার ক্ষমতা রয়েছে এদের।
রোবোটের প্রকারভেদ
রোবটের নকশা করা হয় নির্দিষ্ট কাজের জন্য এবং এদের ব্যাবহার ও করা হয় ক্ষেত্রবিশেষে। যেমন :
- ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট: এসব রোবট বানানো হয় ইন্ডাস্ট্রির কষ্টসাধ্য কাজকে সহজ করার জন্য। এই ধরনের রোবটকে আগে থেকেই প্রোগ্রাম করে রাখা হয় এবং সে অনুযায়ী এরা কাজ করে। এই ধরনের পদ্ধতি মূলত ওয়েল্ডিং, রঙ করা, এসেম্বলি ও ভারী যন্ত্রাংশ উঠানোর কাজে ব্যাবহার করা হয়।
- অটোনোমাস রোবট : এধরনের রোবট সাধারনত ব্যাবহার করা হয় ট্রান্সপোর্ট এর ক্ষেত্রে। নিজে নিজে চলতে পারা গাড়ি, ড্রোন অটোনোমাস রোবটের উদাহরন। এ ধরনের রোবট গুলো বিভিন্ন সেন্সর থেকে প্রাপ্ত তথ্য এর উপর ভিত্তি করে চলে।
- এন্টারটেইনমেন্ট রোবোট : এদের তৈরি করা হয় মানুষকে চিত্তবিনোদন দেয়ার জন্য। এরা নাচতে পারে, গাইতে পারে, মানুষের বলা কথার সাথে কথা বলতে পারে ইত্যাদি।
- হিউম্যানয়েড রোবোট : এ ধরনের রোবট কে প্রোগ্রাম করা হয় এমনভাবে যাতে করে মানুষের কথা, নড়াচড়া এর সাথে নিজেকে কাজ করাতে পারে। "রোবট সুফিয়া" এ ধরনের রোবট এর উদাহরন।
- কোবট : এরা সব ধরনের রোবট থেকে সম্পুর্ণ আলাদা। এরা কোন নির্দিষ্ট পরিবেশ এ নিজের মতো একা কাজ করতে পারে আবার মানুষের সাথে ও মিলে কাজ করতে পারে। এদের সাধারনত ব্যাবহার করা হয় খরুচে, বিপদজনক ও সময়সাপেক্ষ কাজে। এরা মানুষের নড়াচড়া ও কথাবার্তা বুঝতে ও সে অনুযায়ী কাজ করতে সক্ষম।
- এডুকেশনাল রোবট : শিশু কিশোরদের শিক্ষাদান বা কোন সমস্যার সমাধান করতে এই সাহায্যকারী রোবট ব্যাবহার করা হয়।
রোবট ব্যাবহার এর সুবিধা
রোবট তার কাজ নিখুঁতভাবে করার জন্য সমাদৃত। এরা মানুষের চেয়েও নিখুঁতভাবে ও কম সময়ে কাজ করতে সক্ষম। রোবট ব্যাবহার এর সুবিধা সমূহকে কয়েকটি ভাগে আলাদা করা যায়।
- নিরাপত্তা : যেকোন ক্ষতিকর পরিবেশ এ রোবট একটি স্বাচ্ছন্দে কাজ করতে সক্ষম যন্ত্র। এর ফলে মানুষ এর জীবনের নিরাপত্তা যেমন ক্ষুন্ন হয় না তেমনি কাজ গুলোকেও সহজভাবে সম্পাদন করা যায়।
- খরচ কমানো : যেহেতু রোবট ক্লান্ত হয় না এবং একনাগাড়ে কাজ করে জেতে পারে তাই কাজ দ্রুত হয় এবং খরচ কমে আসে।
- নিখুঁত কাজের ধরন : মানুষের চেয়েও দ্রুত এবং নিখুতভাবে কাজ সম্পন্ন করতে পারে রোবট। যেহেতু কাজ নিখুত হয় তাই রিস্ক ফ্যাক্টর ও কমে আসে।
- ফ্লেক্সিবিলিটি : একটি রোবট কে একই সাথে কয়েক্লটি কাজ এর জন্য প্রোগ্রাম করা যায় এবং রোবট তা করতে সক্ষম।
রোবট এর অসুবিধা
যদিও রোবট এর সুবিধা অনেক কিন্ত এর কিছু অসুবিধা ও রয়েছে।
- পরনির্ভরশীলতা: রোবট এর উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার ফলে মানুষ ক্রমেই অলস হয়ে যাচ্ছে। এতে করে মানুষ এর সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতা কমছে।
- নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় : যেহেতু রোবট একটি প্রোগ্রামেবল যন্ত্র তাই এর সিস্টেম হ্যাক এর মাধ্যমে এর কার্যনীতিতে পরিবর্তন করে ক্ষতি সাধন সম্ভব।
- ইকোনমিক বিপর্যয় : রোবট এখন প্রায় সব ধরনের কাজ মানুষ এর থেকেও নিখুত ও কম সময়ে করতে সক্ষম। ফলে মানুষ এর কাজ গুলো রোবটের দখলে যাওয়ার সম্ভাবনা একেবারে ফেলে দেয়ার মতো নয়।
রোবট এবং রোবটিক্স এর ভবিষ্যৎ
রোবট দিনকে দিন আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিনেন্স এর বদৌলতে আরো উন্নত, কর্মক্ষম হচ্ছে। বিভিন্ন রিসার্চ বলছে এই রোবোটিস্ক এর মার্কেট ২০৩২ সাল নাগাদ ১১৫.৮৮ বিলিয়ন ডলার এর হবে।
যদিও রোবটিক্স এর উন্নয়ন এর মাধ্যমে মানব সভ্যতার নিরাপত্তা হুমকির কথা উঠে আসছে, তেমনি এর সাপেক্ষে দ্বিমত ও রয়েছে। কারন রোবটিক্স এর উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে, তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি।
Share
More Blog Articles
Mar 03, 2024
মডেম এর আদ্যোপান্ত
মডেম এর প্রধান কাজ তথ্য কে ডিজিটাল ও এনালগ সিগনাল এ রুপান্তর করা। এরা একই সাথে মডুলেশন এবং ডিমডুলেশন করতে পারে। মডেম মূলত একই সাথে বিভিন্ন চ্যানেল এ যুক্ত ডিভাইস সমূহে তথ্য প্রেরন করতে পারে।
READ MORE
Mar 05, 2024
ডায়োড : ডিজিটাল প্রযুক্তির ভিত্তি
ডায়োড মূলত ছোট আকারের বৈদ্যুতিক একটি যন্ত্র। এদের ব্যাবহার করা হয় বিপরীতমুখী তড়িৎ প্রবাহ রোধ এর জন্য। ডায়োড এর একপ্রান্ত নিম্ন রোধ ও অন্য প্রান্ত উচ্চ রোধ বিশিষ্ট হয়।
READ MORE
Mar 06, 2024
ব্যান্ডউইথ কী: গতিশীল পৃথিবীর গতিতত্ত্বের নির্দেশক
আমাদেরকে পুরো পৃথিবীর সাথে সংযুক্ত থাকার জন্য তথ্য আদান-প্রদান করতে হয়। কখনো এই তথ্য ছবি, ভিডিও, অডিও বা লিখিত আকারে পাঠানো বা গ্রহন করা হয়। এদের পাঠানো এবং গ্রহন করার মধ্যবর্তী সময়ের পার্থক্য হয় অতি নগন্য! তবে এই সময় কম হলেও নেটওয়ার্ক এর বিভিন্নতার জন্য তারতম্য লক্ষ করা যায়। আর এই জায়গাটায় আসে ব্যান্ড উইথ এর ধারনা।
READ MORE