মডেম এর আদ্যোপান্ত
মডেম এর প্রধান কাজ তথ্য কে ডিজিটাল ও এনালগ সিগনাল এ রুপান্তর করা। এরা একই সাথে মডুলেশন এবং ডিমডুলেশন করতে পারে। মডেম মূলত একই সাথে বিভিন্ন চ্যানেল এ যুক্ত ডিভাইস সমূহে তথ্য প্রেরন করতে পারে।
Tanvir Hossain
Writer
PUBLISHED ONMar 03, 2024
মডেম কী?
সংক্ষিপ্তভাবে একটি নেটওয়ার্কিং ডিভাস যা বিদ্যমান নেটওয়ার্ক কে ইন্টারনেট এ রুপান্তরিত করে। কোন একটা ট্রান্সলেটর এর সাথেও মডেম কে তুলনা করা যায়। মডেম এর সাহায্যে ডিজিটাল সিগনালকে এনালগ ও এনালগ সিগনাল কে ডিজিটাল সিগনাল এ রুপান্তর করা হয়। সিগনাল এর এই রুপান্তর এর মাধ্যমে যে যন্ত্র কোন ডিভাইসকে পুরো পৃথিবীর সাথে যুক্ত হয়ে তথ্য আদান-প্রদান এর সুবিধা দেয়, তাই মডেম।
মডেম ও ওয়াইফাই এর মধ্যে পার্থক্য
সাধারনভাবে চিন্তা করলে রাউটার এবং মডেম কে একই রকম মনে হলেও তাদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। দুটি যন্ত্র যদিও আমাদের কোন ডিভাইস কে ইন্টারনেট এর সাথে যুক্ত করে, এদের মধ্যে কার্যপ্রনালীগত পার্থক্য রয়েছে। মডেম মূলত ডিভাইস কে কোন একটি নির্দিষ্ট এলাকার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এর নেটওয়ার্ক এ যুক্ত করে।ঐ সার্ভিস প্রোভাডার অন্য বড় নেটওয়ার্ক রর সাথে যুক্ত থাকে এবং কোন তথ্য আদান বা প্রদান এর সময় ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। অন্যদিকে ওয়াইফাই রাউটার সরাসরি ব্যাবহারকারীকে পুরো পৃথিবীর নেটওয়ার্কে যুক্ত করে।
মডেম এর বৈশিষ্ট
মডেম এর প্রধান কাজ তথ্য কে ডিজিটাল ও এনালগ সিগনাল এ রুপান্তর করা। এরা একই সাথে মডুলেশন এবং ডিমডুলেশন করতে পারে। মডেম মূলত একই সাথে বিভিন্ন চ্যানেল এ যুক্ত ডিভাইস সমূহে তথ্য প্রেরন করতে পারে। মডেম বিভিন্ন ভাবে নেটওয়ার্ক এর সাথে সংযুক্ত হতে পারে। এর মধ্যে ডায়াল আপ, ওয়ারলেস কানেকশন অন্যতম। মডেমভেদে এদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান স্পিড করার গতি নির্ভর করে। একটু পরেই এ ব্যাপার গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা আছে। মডেম তথ্য আদান-প্রদান এর জন্য যেমন কোন নেটওয়ার্ককে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করতে পারে তেমনি তথ্য সুরক্ষার জন্য নিরাপত্তা অন্য নেটওয়ার্ক এর অনুপ্রবেশ রক্ষা করতে পারে।
মডেম এর কার্যপ্রনালী
মডেম যেহেতু একই সাথে তথ্য গ্রহন ও প্রেরন করতে পারে তাই এর কাজ করার ধরন ও কিছুটা ভিন্ন।
ধাপ ১- তথ্য সংগ্রহ: যখন ডিভাইস থেকে তথ্য প্রেরন এর প্রয়োজন হয় তখন সব তথ্য ও উপাত্ত একসাথে সিস্টেম বা ডিভাইস ডিজিটাল সিগনাল এ রুপান্তর করে এবং মডেম এ প্রেরন করে।
ধাপ ২- মডুলেশন: মডুলেশন বলতে বুঝানো হয় ডিজিটাল ডাটা এর এনালগ এ সিগনাল এ রুপান্তর করার প্রক্রিয়াকে। ইন্টারনেট এর সিগনাল মূলত এনালগ এবং কোন তথ্য ইন্টারনেট এর মাধ্যমে স্থানান্তর এর জন্য এ প্রক্রিয়া আবশ্যক।
ধাপ ৩- স্থানান্তরিকরন: মডুলেটেড ডাটা কে প্রেরক মডেম তার নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে প্রাপক মডেম এ স্থানান্তর করে।
ধাপ ৪- ডিমুডুলেশন: ডিমডুলেশন দ্বারা এনালগ সিগনাল এর ডিজিটাল সিগনাল এর রুপান্তর কে বুঝানো হয়।প্রেরক মডেম থেকে প্রাপ্ত সিগনাল প্রাপক মডেম তার সাথে সংযুক্ত ডিভাইস এ প্রেরন করে ডিজিটাল সিগনাল হিসেবে।
ধাপ ৫- ডিকোডিং: মডেম থেকে প্রাপ্ত ডিজিটাল সিগনাল অবশেষে ডিকোড হয়ে সিস্টেম এর কাজ এর জন্য প্রস্তুত হয়।
মডেম'র প্রকারভেদ
-
ডিএসএল মডেম: ইউএসবি দিয়ে কম্পিউটার এ সংযোগ করা মডেম এর সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। এ ধরনের মডেম মূলত ডিএসএল প্রযুক্তি ব্যাবহার করে। এ প্রযুক্তি তে তথ্য স্থানান্তর দ্রুত হয়।
-
তারবিহীন মডেম: এ ধরনের মডেম ব্যাবহার এর জন্য কোন ক্যাবল এর প্রয়োজন হয় না এবং সাধারন মানুষ মূলত এ ধরনের মডেম নিজেদের কাজে ব্যাবহার করে থাকে। এ ধরনের মডেম রেডিও ফ্রিকোয়েন্সী ব্যাবহার করে তথ্য আদান- প্রদান এর জন্য।
-
এক্সটার্নাল মডেম: সংযোগকারী তার এর মাধ্যমে মূলত এ মডেম কোন সিস্টেম এ যুক্ত করা হয়। দ্রুত তথ্য স্থানান্তর, সংযোগ স্থাপন সহজ ও নিরাপত্তা ব্যাবস্থা ভালো হওয়ায় এই মডেম ব্যাবহার করা হয়।
-
স্যাটালাইট মডেম: কোন ধরনের ক্যাবল ছাড়া শুধুমাত্র স্যাটালাইট প্রযুক্তির মাধ্যমে এ মডেম কাজ করে। উচ্চমূল্য ও ধীরগতির তথ্য স্থানান্তর ক্ষমতার জন্য এ ধরনের মডেম সাধারনত ব্যাবহার হতে দেখা যায় না।
-
হাফ ডুপ্লেক্স মডেম: এ ধরনের মডেম একই সময়ে শুধুমাত্র তথ্য গ্রহন বা প্রেরন করতে পারে।
-
ফুল ডুপ্লেক্স মডেম: এরা একই সাথে তথ্য আদান ও প্রদান, দুই করতে পারে।
-
ডায়াল আপ মডেম: গতানুগতিক টেলিফোনে লাইন ব্যাবহার এ ধরনের ব্যাবস্থায় ডিভাইসকে ইন্টারনেট এর সাথে সংযুক্ত করা হয়। এ ধরনের মডেম এর তথ্য স্থানান্তর এর গতি শুধুমাত্র ৫৬ কেবি/সেকেন্ড।
মডেম এর সুবিধাসমূহ
-
সহজে ব্যাবহারযোগ্য: মডেম ব্যাবহার এর জন্য কোন আলাদা খরচ করতে হয় না। মডেম ব্যাবহারকারীদের কাছে এমনভাবেই বিক্রি করা হয় যাতে সব ব্যাবহারকারী সহজেই তা ব্যাবহার করতে পারে।
-
খরচ কম হয় : যেহেতু সহজে ব্যাবহারযোগ্য, তাই খরচ ও কম হয়।
-
সব ধরনের ডিভাইস এ ব্যাবহারযোগ্য: মডেম কম্পিউটার, মোবাইল, ল্যাপটপ এবং ট্যাবলেট, এ সব ধরনের ডিভাইস এর সাথেই ব্যাবহারযোগ্য।
মডেম এর অসুবিধাসমূহ
-
ধীরগতি : সাধারনত কিছু শ্রেণির মডেম যেমন ডায়াল-আপ মডেম, অনেক কম গতিতে তথ্য স্থানান্তর করে।
-
তথ্য নিরাপত্তা : মডেম ব্যাবহার এর মাধ্যমে খুব সহজেই হ্যাকিং বা ভাইরাস অ্যাটাক এর সম্ভাবনা থাকে। তাই মডেম ব্যাবহার এর সময় আগে থেকেই সতর্ক হওয়া শ্রেয়।
মডেম কোন ডিভাইসকে বৃহত্তর এর নেটওয়ার্ক এর পৃথিবীতে সংযুক্ত করে। ফলে তথ্য আদান-প্রদান সহজ হয়, কাজের গতি বারে। মডেম ব্যাবহার এর ফলে কম খরচে ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করা যায়। তাছাড়া মফস্বল এলাকায় নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবার জন্য মডেম ব্যাবহার করা একটি সাধারন ব্যাপার।
Share
More Blog Articles
Mar 04, 2024
রোবট এবং রোবটিক্স : বিস্ময়কর এক যান্ত্রিক রাজ্য
রোবটিক্স যদিও একটি শব্দ, কিন্ত কখনো কি চিন্তা করেছেন ছোট একটি শব্দে কত বিশাল একটি যান্ত্রিক পৃথিবী লুকিয়ে আছে! রোবটিক্স শব্দটি শোনলেই আমাদের মনের ভেতর একটা অন্য রকম অনুভূতি তৈরি হয়।
READ MORE
Mar 05, 2024
ডায়োড : ডিজিটাল প্রযুক্তির ভিত্তি
ডায়োড মূলত ছোট আকারের বৈদ্যুতিক একটি যন্ত্র। এদের ব্যাবহার করা হয় বিপরীতমুখী তড়িৎ প্রবাহ রোধ এর জন্য। ডায়োড এর একপ্রান্ত নিম্ন রোধ ও অন্য প্রান্ত উচ্চ রোধ বিশিষ্ট হয়।
READ MORE
Mar 06, 2024
ব্যান্ডউইথ কী: গতিশীল পৃথিবীর গতিতত্ত্বের নির্দেশক
আমাদেরকে পুরো পৃথিবীর সাথে সংযুক্ত থাকার জন্য তথ্য আদান-প্রদান করতে হয়। কখনো এই তথ্য ছবি, ভিডিও, অডিও বা লিখিত আকারে পাঠানো বা গ্রহন করা হয়। এদের পাঠানো এবং গ্রহন করার মধ্যবর্তী সময়ের পার্থক্য হয় অতি নগন্য! তবে এই সময় কম হলেও নেটওয়ার্ক এর বিভিন্নতার জন্য তারতম্য লক্ষ করা যায়। আর এই জায়গাটায় আসে ব্যান্ড উইথ এর ধারনা।
READ MORE