
ব্যান্ডউইথ কী: গতিশীল পৃথিবীর গতিতত্ত্বের নির্দেশক
আমাদেরকে পুরো পৃথিবীর সাথে সংযুক্ত থাকার জন্য তথ্য আদান-প্রদান করতে হয়। কখনো এই তথ্য ছবি, ভিডিও, অডিও বা লিখিত আকারে পাঠানো বা গ্রহন করা হয়। এদের পাঠানো এবং গ্রহন করার মধ্যবর্তী সময়ের পার্থক্য হয় অতি নগন্য! তবে এই সময় কম হলেও নেটওয়ার্ক এর বিভিন্নতার জন্য তারতম্য লক্ষ করা যায়। আর এই জায়গাটায় আসে ব্যান্ড উইথ এর ধারনা।

Tanvir Hossain
Writer
PUBLISHED ONMar 06, 2024
ব্যান্ডউইথ কী
নেটওয়ার্ককে মাধ্যম হিসেবে নিয়ে আমরা তথ্য আদান-প্রদান করি। এর নেটওয়ার্কে কোন তথ্য কি পরিমান সময় নিয়ে তথ্য আদান-প্রদান হয় তা বুঝানো হয় ব্যান্ডউইথ দিয়ে। অর্থাৎ কোন নেটওয়ার্কের মধ্যে দিয়ে তথ্য আদান-প্রদান এর হার হলো ব্যান্ডউইথ। ব্যান্ডউইথ নির্দেশ করে কোন একটি সময়ে কি পরিমান ডেটা নেটওয়ার্ক এর মধ্যে দিয়ে স্থানান্তর হবে। কোন প্রেরক নেটওয়ার্ক এর মধ্য দিয়ে যত কম সময়ে বেশি তথ্য পাঠাতে পারবে সেই নেটওয়ার্কের ব্যান্ডউইথ তত বেশি।
ব্যান্ডউইথ এর ইতিহাস
ব্যান্ডউইথ এর চলন শুরু হয় ১৯৯৯ সালে ড্যাভিড মরকেন নামক এক ব্যাক্তির হাত ধরে। এরপর ২০ শতকের শুরুতে রেডিও কমিউনিকেশন এর জন্য ব্যান্ডউইথ এর ব্যাবহার শুরু হয় এবং কালের পরিক্রমায় বিবর্তন হতে হতে তা আজকের এই ডিজিটাল পৃথীবির অতি প্রয়োজনীয় নেটওয়ার্ক ব্যাবস্থা হয়ে দাড়িছে।
ব্যান্ডউইথ কত প্রকার
গতির ধরন এর উপর ভিত্তি করে ব্যান্ডউইথ মূলত দুই প্রকার। সিমেট্রিক এবং অ্যাসিমেট্রিক।
সিমেট্রিক ব্যান্ডউইথ
তথ্য স্থানান্তর এর গতি যদি প্রাপক এর প্রেরক এর দুই দিকেই সমান হয় তবে তাকে সিমেট্রিক ব্যান্ডউইথ বলা হয়। অথবা, যদি কোন নেটওয়ার্কের আপলোড এবং ডাউনলোড স্পিড সমান হয় তবে তাকে সিমেট্রিক ব্যান্ডউইথ সংযোগ বলে। এ ধরনের সংযোগ বড় ধরনের ফাইল দ্রুত সময়ে স্থানান্তর এর জন্য ব্যাবহার করা হয়। সাধারনত ভিডিও কনফারেন্স, ক্লাউড স্টোরেজ, বড় অফিস ইত্যাদির জন্য সিমেট্রিক্যাল সংযোগ প্রয়োজন হয়। উদাহরনসরূপ ৫০/৫০ বা ৬০০/৬০০ ব্যান্ডউইথ সংযোগকে সিমেট্রিক্যাল ব্যান্ডউইথ বলা হয়। এখানে ৫০/৫০ দ্বারা বুঝানো হয় ডাউইনলোড স্পিড ৫০ mbps এবং ডাউইনলোড স্পিড ৫০mbps। অনেক দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান ক্ষমতার জন্য সিমেট্রিক্যাল ব্যান্ডউইথ সংযোগ বিখ্যাত।
অ্যাসিমেট্রিক্যাল ব্যান্ডউইথ
সিমেট্রিক্যাল ব্যান্ডউইথ এ আপলোড এবং ডাউনলোড এর গতি সমান হলেও অ্যাসিমেট্রিকেল ব্যান্ডউইথ এ গতি সমান হয় না এবং সিমেট্রিক্যাল এর সাথে অ্যাসিমেট্রিক্যাল ব্যান্ডউইথ এর মধ্যে এটিই হলো মূল পার্থক্য। অ্যাসিমেট্রিক্যাল ব্যান্ডউইথ এর গতি বুঝানো হয় ৬০/৩০mbps বা ৫/২mbps এইভাবে। এখানে ৫/২ দ্বারা বুঝানো হয় উক্ত ব্যান্ডউইথ সংযোগ এর ডাউনলোড এর গতি ৫mbps এবং আপলোড এর গতি ২mbps। অ্যাসিমেট্রিক্যাল সংযোগ এর দাম তুলনামূলকভাবে কম হয়ে থাকে। তবে এ ধরনের ব্যান্ডউইথ সংযোগে ডাউনলোড স্পিড বেশি হয়ে থাকে। ছোট অফিস বা ব্যাক্তিগত নেটওয়ার্ক ব্যাবস্থার জন্য এ ধরনের ব্যান্ডউইথ পরিচিত।
সব ব্যান্ডউইথ ব্যাবহারকারী উচ্চ গতিসম্পন্ন সংযোগ ব্যাবহার করতে চায়। কিন্ত খরচ এবং চাহিদা এর সম্মনয় করে ব্যাবহারভেদে যেকোন ধরনের সংযোগ ব্যাবহার করা যেতে পারে।
ব্যান্ডউইথ 128kbps বলতে কী বুঝায়
আমরা জেনেছি ব্যান্ডউইথ বলতে বুঝানো হয় কোন নেটওয়ার্কের মধ্য দিয়ে একক সময়ে তথ্য স্থানান্তর করার ক্ষমতাকে বুঝানো হয়। যদি কোন ব্যান্ডউইথ সংযোগ গতি 128kbps হয় তবে ঐ নেটওয়ার্ক এর মধ্যে দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ১২৮০০০ বাইট পরিমান তথ্য স্থানান্তর সম্ভব।
ব্যান্ডউইথ ব্যাবহার এর গুরত্ব
ব্যান্ডউইথ কোন একটি নির্দিষ্ট জায়গার জন্য আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। ব্যান্ডউইথ সংযোগ মূলত প্রদান করা হয় কোন নেটওয়ার্ক ডিভাইস যেমন মডেম বা রাউটার, তার দিয়ে বা তারবিহীন ভাবে। এই সংযোগ প্রদান করে এলাকাভিত্তিক ব্যান্ডউইথ অপারেটর। আমাদের যোগাজযোগ রক্ষার জন্য তথ্য আদান প্রদান করতে হয়। এ তথ্য হতে পারে অডিও, ভিডিও,ছবি অথবা লিখা। এই স্থানান্তর ও গ্রাহক যাতে গ্রহন করে তা দেখতে, শুনতে বা পড়তে পারে এজন্য ব্যান্ডউইথ প্রয়োজন হয়। ব্যান্ডউইথ ছাড়া এ কাজগুলো সম্ভব নয়। নিচে একটি ছবির মাধ্যমে প্রয়োজনভেদে কোন কাজের জন্য কি পরিমান ব্যান্ডউইথ প্রয়োজন তা দেখে নেয়া যাক-
ব্যান্ডউইথ এবং ব্রডব্যান্ড এর মধ্যে পার্থক্য
ব্রডব্যান্ড ও ব্যান্ডউইথ এর মধ্যে পার্থক্য বুঝার জন্য আগে জানতে হবে ব্রডব্যান্ড কী? ব্রডব্যান্ড বলতে বুঝানো হয় ইন্টারনেট এর সাথে কোন একটি ডিভাইস কত দ্রুত সংযোগ হতে পারে সে সক্ষমতা। ব্রডব্যান্ড দিয়ে কোন ব্যাবহারকারী এবং ইন্টারনেট এর মধ্যে সংযোগ করা হয়। আমাদের দৈনন্দিন কাজে ব্যাবহার করা মডেম বা রাউটার এই ব্রডব্যান্ড এর সিগনাল কে রিসিভ করে এবং আমাদের ডিভাইসকে এই সিগন্যাল এর সাথে সংযোগ করে একটি নেটওয়ার্ক ব্যাবস্থা গড়ে তুলে। অন্যদিকে ব্যান্ড উইথ দিয়ে বুঝানো হয় কোন নেটওয়ার্কে এক বা একাধিক ডিভাইস প্রতি একক সময়ে কি পরিমান তথ্য আদান প্রদান করতে পারে।
Share
More Blog Articles

Mar 04, 2024
রোবট এবং রোবটিক্স : বিস্ময়কর এক যান্ত্রিক রাজ্য
রোবটিক্স যদিও একটি শব্দ, কিন্ত কখনো কি চিন্তা করেছেন ছোট একটি শব্দে কত বিশাল একটি যান্ত্রিক পৃথিবী লুকিয়ে আছে! রোবটিক্স শব্দটি শোনলেই আমাদের মনের ভেতর একটা অন্য রকম অনুভূতি তৈরি হয়।
READ MORE

Mar 03, 2024
মডেম এর আদ্যোপান্ত
মডেম এর প্রধান কাজ তথ্য কে ডিজিটাল ও এনালগ সিগনাল এ রুপান্তর করা। এরা একই সাথে মডুলেশন এবং ডিমডুলেশন করতে পারে। মডেম মূলত একই সাথে বিভিন্ন চ্যানেল এ যুক্ত ডিভাইস সমূহে তথ্য প্রেরন করতে পারে।
READ MORE

Mar 05, 2024
ডায়োড : ডিজিটাল প্রযুক্তির ভিত্তি
ডায়োড মূলত ছোট আকারের বৈদ্যুতিক একটি যন্ত্র। এদের ব্যাবহার করা হয় বিপরীতমুখী তড়িৎ প্রবাহ রোধ এর জন্য। ডায়োড এর একপ্রান্ত নিম্ন রোধ ও অন্য প্রান্ত উচ্চ রোধ বিশিষ্ট হয়।
READ MORE