ডাটা কমিউনিকেশন কি
ডাটা কমিউনিকেশন সিস্টেম বা ডাটা কমিউনিকেশন বলতে বুঝানো হয় বিভিন্ন ডিজিটাইল ডিভাইস দ্বারা কোন একটি নির্দিষ্ট মাধ্যমে ব্যাবহার করে তথ্যের আদান-প্রদান। এক্ষেত্রে একটি ডিভাইস বহু সংখ্যক ডিভাইসে তথ্য প্রদান করতে পারে অথবা অনেকগুলো ডিভাইস থেকে একটি ডিভাইস তথ্য গ্রহন করতে পারে।
Tanvir Hossain
Writer
PUBLISHED ONMar 18, 2024
ধরা যাক আমরা কোন একটি তথ্য স্থানান্তর করতে চাই। এক্ষেত্রে আমরা কী করি? আমরা একটি মাধ্যমে এই তথ্য আদান-প্রদান করি। এই তথ্য স্থানান্তর হয় কয়েকটি ধাপে। যদি আমরা কোন ব্যাক্তির মাধ্যমে কোন তথ্য স্থানান্তর করতে চাই তবে প্রথম ধাপে প্রাপক থেকে ঐ ব্যাক্তি সেই তথ্য পাবে এবং ঐ ব্যাক্তি পরবর্তী ধাপে প্রাপককে তথ্য দিবে। অর্থাৎ একটি পদ্ধতি অবলম্বন করে আমদের তথ্য স্থানান্তর করতে হয়। এবার আসা যাক ডাটা কমিউনিকেশনের ব্যাপারে। কমিউনিকেশন বলতে আমরা বুঝি একে অপরের সাথে যোগাযোগ করা বা শব্দ,লিখা, ভিডিও অথবা কোন একটি মাধ্যম ব্যাবহার করে তথ্য আদান-প্রদান করা। এখন সহজভাবেই ডাটা কমিউনিকেশন ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করা যায়।
ডাটা কমিউনিকেশন সিস্টেম কি?
ডাটা কমিউনিকেশন সিস্টেম বা ডাটা কমিউনিকেশন বলতে বুঝানো হয় বিভিন্ন ডিজিটাইল ডিভাইস দ্বারা কোন একটি নির্দিষ্ট মাধ্যমে ব্যাবহার করে তথ্যের আদান-প্রদান। এক্ষেত্রে একটি ডিভাইস বহু সংখ্যক ডিভাইসে তথ্য প্রদান করতে পারে অথবা অনেকগুলো ডিভাইস থেকে একটি ডিভাইস তথ্য গ্রহন করতে পারে। আমরা বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন ছবি, লিখা, বা অডিও একে অন্যের মধ্যে আদান-প্রদান করে থাকি যা ডাটা কমিউনিকেশন সিস্টেম'র অংশ। কোন একটি নেটওয়ার্ক ব্যাবস্থায় সকল ধরনের নেটওয়ার্কিং ডিভাইস যেমন মোবাইল, কম্পিউটার, ট্যাবলেট ইত্যাদি একে অন্যের সাথে সংযুক্ত থাকে, একে অন্যকে তথ্য প্রদান করতে পারে বা একে অন্যথেকে গ্রহন করতে পারে। এক্ষেত্রে কোন ডিভাইস একে অন্যের উপর নির্ভরশীল থাকে না।
ডাটা কমিউনিকেশন মোড কী?
ডাটা কমিউনিকেশন মোড বলতে বুঝানো হয় একাধিক ডিভিসের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান এর সময় একই সাথে কোন ডিভাইস তথ্য পাঠাবে এবং গ্রহন করবে নাকি শুধুমাত্র প্রেরক হিসেবে কাজ করবে এর ধরন। ডাটা কমিউনিকেশন মোডকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়।
- সিম্পলেক্স কমিউনিকেশনঃ এই প্রবাহ সিস্টেমকে ইউনিডাইরেকশনাল কমিউনিকেশন সিস্টেম বা একমুখী তথ্য আদান প্রদান ব্যাবস্থাও বলা হয়ে থাকে। কারন এই ধরনের ডাটা কমিউনিকেশন সিস্টেমে যেকোন একটি ডিভাইস তথ্য প্রদান করবে এবং অন্য কোন ডিভাইস তা গ্রহন করবে। কিন্ত কোন ডিভাইস একই সাথে তথ্য আদান এবং প্রদান করতে পারবে না। উদাহরণস্বরূপ IoT, কিবোর্ড ব্যাবহার, স্পিকারে শব্দ শোনা ইত্যাদি লক্ষ করা যায়।
- হাফ-ডুপ্লেক্স কমিউনিকেশনঃ এ ধরনের ডাটা কমিউনিকেশন সিস্টেমকে টু-ওয়ে কমিউনিকেশন সিস্টেম বা বাইডিরেকশনাল কমিউনিকেশন সিস্টেমও বলা হয়। এ ধরনের ডাটা কমিউনিকেশন মোডে কোন একটি ডিভাইস একই সময়ে তথ্য আদান বা প্রদানের কাজ করতে পারে। এক্ষেত্রে একটি ডিভাইস যখন তথ্য প্রেরক এর কাজ করবে তখন অন্য ডিভাইস শুধুমাত্র সেই তথ্য গ্রহন করবে, আবার যখন পূর্বের গ্রাহক ডিভাইস তথ্য প্রেরন করবে তখন পূর্বের প্ররক ডিভাইস গ্রাহক এর কাজ করবে। অর্থাৎ একই সময়ে একে অপরের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারবে না।তবে ঐ সময়ে অপর ডিভাইস কোন তথ্য প্রদান করতে পারে না। ওয়াকিটকি এই ডাটা ট্রান্সমিশন মোডের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরন।
- ফুল ডুপ্লেক্স কমিউনিকেশনঃ এই ডাটা কমিউনিকেশন ব্যাবস্থাও হাল্ফ ডুপ্লেক্স সিস্টেমের মতো টু-ওয়ে কমিউনিকেশন সিস্টেম বা বাইডিরেকশনাল কমিউনিকেশন সিস্টেম। তবে এই কমিউনিকেশন মোড এর বিশেষত্ব হলো, এই কমিউনিকেশন সিস্টেমে একই সময়ে দুটি ডিভাইস একে অপরের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে। যেমন মোবাইল ফোন, টেলিফোম, ল্যান্ডলাইন ইত্যাদি।
ডাটা কমিউনিকেশন সিস্টমের কার্যপ্রক্রিয়া
মূলত পাচটি ধাপে বা পাচটি অংশে বিভক্ত হয়ে ডাটা কমিউনিকেশন সিস্টেম গড়ে উঠে।
- ম্যাসেজঃ একটি ম্যাসেজ হলো যেকোন তথ্য যেমন ছবি, ভিডিও, অডিও, লিখনি ইত্যাদি যা কেউ স্থানান্তর করতে চায়।
- সেন্ডারঃ উপরে যে ম্যাসেজ এর কথা বলা হলো তা অবশ্যই নিজে নিজে স্থানান্তর হবে না, কাউকে পাঠাতে হবে। এক্ষেত্রে কোন ডিভাইস থেকে ম্যাসেজটি পাঠাতে হবে যা হতে পারে কোন মোবাইল, ল্যাপটপ বা যেকোন ধরনের ডিজিটাল ট্রান্সমিশন ডিভাইস।
- রিসিভারঃ সেন্ডার থেকে প্রাপ্ত ম্যাসেজ যে ডিভাইস কোন ব্যাক্তির কাছে পৌছে দিবে সে হবে রিসিভার।
- ট্রান্সমিশিন মিডিয়ামঃ একে কমিউনিকেশন চ্যানেলও বলা হয়ে থাকে। কমিউনিকেশন চ্যানেল মূলত একটি মাধ্যম যার সাহায্যে দুই বা ততধিক ডিভাইস একে অপরের সাথে যুক্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে ডিভাইসসমূহ একে অপরের সাথে তারের মাধ্যমে বা তারবিহীন সংযুক্ত হয়ে একটি নেটওয়ার্ক ব্যাবস্থা গড়ে তোলে।
- প্রোটকলঃ একে সেট অফ রুলস ও বলা হয়। যখন কেউ কোন তথ্য পাঠাতে চায় তখন সেই তথ্য অবশ্যই এমন হতে হবে যাতে করে রিসিভার তা বুঝতে পারে। আবার একই নেটওয়ার্কে অনেকগুলো ডিভাইস সংযুক্ত থাকে। এখন কেউ যদি মি.ব কে ম্যাসেজ পাঠায় তবে তা নিশ্চয়ই মি. ম এর কাছে গেলে হবে না! তাই সেন্ডার এর টার্গেটেড রিসিভার চিনতে হবে এবং প্রটোকল সেই কাজ করে।
ডাটা কমিউনিকেশন এর ব্যাবহারক্ষেত্র
কম্পিউটার সিস্টেম ও বিভিন্ন নেটওয়ার্ক এর মধ্যে সংযোগ এর মাধ্যমে বিভিন্ন অসংখ্য সুবিধা ভোগ করা যায় যা মূলত ডাটা কমিউনিকেশন সিস্টেম এর বদৌলতে সম্ভব। এর মধ্যে আমারা সচরাচর ব্যাবহার করি এমন কিছু ডাটা কমিউনিকেশন সিস্টেমের সুফল হলো-
- স্টোরেজ ডিভাইসে তথ্য সংগ্রহ
- প্রিন্টার এর মাধ্যমে প্রিন্টিং এর কাজ
- ইন্টারনেট এর মাধ্যমে তথ্য স্থানান্তর
- ডায়নামিক ওয়েবপেজ এর মাধ্যমে একাধিক ব্যাবহারকারীর মধ্যে সংযোগ স্থাপন।
- ভিডিও কনফারেন্স
- প্যারালাল কম্পিউটিং
- ম্যাসেজিং
ডাটা কমিউনিকেশন সিস্টেমের মাধ্যম
ডাটা ট্রানফার করার জন্য কোন ডিভাইসকে অবশ্যই একে অপরের সাথে যুক্ত হতে হয়। এক্ষেত্রে দুইভাবে একাধিক ডিভাইসকে সংযুক্ত করা যায়।
- তার ব্যাবহার করে
- তারবিহীন
তার ব্যাবহারে সংযোগ
ডিভাইসগুলোকে ডাটা স্থানান্তর এর উপযোগী করতে তার বা ক্যাবল দ্বারা সংযোগ করার মাধ্যমে ডাটা কমিউনিকেশন সিস্টেম গড়ে তোলা যায়। এক্ষেত্রে তিন ধরনের তার ব্যাবহার করা যায়।
- টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলঃ এ ধরনের ক্যাবল বানানো হয় দুইটি কপার তারকে একত্রে পেচিয়ে। প্রত্যেকটি কপার এর তার প্লাস্টিক দিয়ে মোড়ানো থাকে। এরকম দুইটি পেচানো তার আবার একাধিক পেচানো তার এর সাথে একত্রে রেখে আরেকটি প্লাস্টিক প্রলেপ দিয়ে মোড়ানো থাকে।
-
কো-এক্সিয়েল ক্যাবলঃ এদের মধ্যে দিয়ে টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল থেকে বেশি পরিমান ব্যান্ডউইথ স্থানান্তর করা যায়। নিচের ছবির মতো কো-এক্সিয়েল ক্যাবল দেখতে হয়। বেশি দুরত্বে তথ্য আদান প্রদানের ক্ষেত্রে কো-এক্সিয়েল ক্যাবল ব্যাবহার হয়।
-
অপটিক্যাল ফাইবারঃ অপটিক্যাল ফাইবারে তথ্য স্থানান্তর হয় আলোক তরঙ্গ হিসেবে।এর ধরনের তারের মধ্যে দিয়ে আলোক তরঙ্গ প্রতিফলনের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান হয়। ফুল ডুপ্লেক্স কমিউনিকেশন সিস্টেমে ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল ব্যাবহার করলে দুটি তার ব্যাবহার করতে হয়।
তারবিহীন সংযোগ
এই ধরনের সংযোগ দেওয়ার জন্য মূলত রেডিও ওয়েভ, মাইক্রো ওয়েভ, ইনফ্রারেড ওয়েভ ব্যাবহার করা হয়। এ ধরনের ওয়েভ ব্যাবহার করে এমন কিছু তারবিহীন প্রযুক্তি -
-
ব্লুটুথঃ কম দুরত্বে তথ্য স্থানান্তর এর জন্য ব্লুটুথ ওয়ারল্যাস সিস্টেম জনপ্রিয়। কম্পিউটার সিস্টেম এর সাথে মাউস, কিবোর্ড, মোবাইলে তথ্য স্থানান্তর এর জন্য ব্লুটুথ প্রযুক্তি বহুল সমাদৃত। ব্লুটিথ প্রযুক্তি ব্যাবহার করে একত্রে ২৫৫ টি ডিভাইস একই নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করা যায়। সাধারণত এই ধরনের নেটওয়ার্কে ১-২ mbps তথ্য স্থানান্তর সম্ভব।
-
(LAN) ল্যানঃ লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (LAN) বড় পরিসরে নেটওয়ার্ক ব্যাবস্থা গড়ে তোলার জন্য পরিচিত। এ ধরনের নেটওয়ার্ক ডিভাইসকে ইন্টারনেট এর সাথে যুক্ত করতে পারে। ওয়াইফাই এই ধরনের নেটওয়ার্ক এর একটি উদাহরন।
Share
More Blog Articles
Mar 04, 2024
রোবট এবং রোবটিক্স : বিস্ময়কর এক যান্ত্রিক রাজ্য
রোবটিক্স যদিও একটি শব্দ, কিন্ত কখনো কি চিন্তা করেছেন ছোট একটি শব্দে কত বিশাল একটি যান্ত্রিক পৃথিবী লুকিয়ে আছে! রোবটিক্স শব্দটি শোনলেই আমাদের মনের ভেতর একটা অন্য রকম অনুভূতি তৈরি হয়।
READ MORE
Mar 03, 2024
মডেম এর আদ্যোপান্ত
মডেম এর প্রধান কাজ তথ্য কে ডিজিটাল ও এনালগ সিগনাল এ রুপান্তর করা। এরা একই সাথে মডুলেশন এবং ডিমডুলেশন করতে পারে। মডেম মূলত একই সাথে বিভিন্ন চ্যানেল এ যুক্ত ডিভাইস সমূহে তথ্য প্রেরন করতে পারে।
READ MORE
Mar 05, 2024
ডায়োড : ডিজিটাল প্রযুক্তির ভিত্তি
ডায়োড মূলত ছোট আকারের বৈদ্যুতিক একটি যন্ত্র। এদের ব্যাবহার করা হয় বিপরীতমুখী তড়িৎ প্রবাহ রোধ এর জন্য। ডায়োড এর একপ্রান্ত নিম্ন রোধ ও অন্য প্রান্ত উচ্চ রোধ বিশিষ্ট হয়।
READ MORE