বায়োইনফরমেটিক্স কী?
বায়োইনফরমেটিক্স ধারনার প্রথম প্রবর্তন করেন Paulien Hogeweg এবং Ben হেস্পের নামক দুই বিজ্ঞানী ১৯৭০ সালে। তখন বায়োইনফরমেটিক্সকে মূলত জীববিজ্ঞান এর তথ্য ও উপাত্ত নিয়ে কাজ করাকেই বুঝানো হতো। এরপর ১৯৯০ সালের দিকে বায়োইনফরমেটিক্স নিয়ে বিস্তর গবেষণা শুরু হয় এবং ডিএনএ সিকোয়েন্সিং এর কাজে এর ব্যাবহার বারতে থাকে।
Tanvir Hossain
Writer
PUBLISHED ONMar 17, 2024
বায়োইনফরমেটিক্স বলতে বুঝানো হয় জীববিজ্ঞান এর এর বিভিন্ন শাখা থেকে প্রাপ্ত সমস্যাসমূহের তথ্যের উপর ভিত্তি করে গণিত, পরিসংখ্যান, কম্পিউটার, রসায়ন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি ব্যাবহার করে ঐ সমস্যা গুলোর সমাধান বের করা। সহজভাবে বলতে বায়োইনফরমেটিক্স দ্বারা বুঝানো হয় বিভিন্ন প্রযুক্তি এর ব্যাবহার এর মাধ্যমে জীববিজ্ঞান এর সমস্যাসমূহের সমাধান করা।
বায়োইনফরমেটিক্সের ইতিহাস
বায়োইনফরমেটিক্স ধারনার প্রথম প্রবর্তন করেন Paulien Hogeweg এবং Ben হেস্পের নামক দুই বিজ্ঞানী ১৯৭০ সালে। তখন বায়োইনফরমেটিক্সকে মূলত জীববিজ্ঞান এর তথ্য ও উপাত্ত নিয়ে কাজ করাকেই বুঝানো হতো। এরপর ১৯৯০ সালের দিকে বায়োইনফরমেটিক্স নিয়ে বিস্তর গবেষণা শুরু হয় এবং ডিএনএ সিকোয়েন্সিং এর কাজে এর ব্যাবহার বারতে থাকে।
বায়োইনফরমেটিক্স এ ব্যাবহৃত ড্যাটা
জৈবিক দেহের ডিএনএ’র জিনোম সিকোয়েন্স, প্রোটিনের অ্যামাইনো এসিড সিকোয়েন্স, প্রোটিন এর ত্রিমাত্রিক আকৃতি বিশ্লেষণ, নিউক্লিক এসিড, আরএনএ সিন্থেসিস, প্রোটিওমিক্স, কোষ প্রোটিন এর বিশ্লেষণ, কোষ ম্যাটাবলিসম, কোষ এর যেকোন প্রাকৃতিক পরিবর্তন, প্রতিটি কোষ এর স্ট্রাকচার এর তথ্য, বিভিন্ন সময়ে ডাটা এর পরিবর্তন পরীক্ষন, বিভিন্ন কৃত্রিম পরিবেশ এর ধরন পরিবর্তন, বিভিন্ন স্যাম্পল ইত্যাদি থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও উপাত্তকে বায়োইনফরমেটিক্সে ব্যাবহার করা হয়। বায়োইনফমেটিক্স মূলত জীববিজ্ঞান শাখার বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে নতুন উদ্যম প্রদান করেছে৷
বায়োইনফরমেটিক্স এর তথ্য সংগ্রহ
বায়োইনফরমেটিক্সকে তরান্বিত করার জন্য বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থান, ভিন্ন পরিবেশ থেকে প্রত্যেকে তথ্য সংগ্রহ করে বায়োইনফরমেটিক্সে ব্যাবহার এর জন্য। ফলে তথ্যের এ ভান্ডার দিন দিন বড় আকার ধারন করছে। ফলে এখনকার সময়ে অনেক ক্ষেত্রে প্রতিটি পরীক্ষা করে বায়োইনফরমেটিক্স শাখায় পদাচারন করতে হয় না, বরং অন্য কারো নিরীক্ষার তথ্য ব্যাবহার করার মাধ্যমে নিজের পরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করা সম্ভব হচ্ছে। এই কাজকে সহজ করার জন্য সকল রিসার্চ এর তথ্যকে একত্রিত করা হয়ে থাকে।
এই তথ্য ভান্ডার যেমন কোন একটি ল্যাব এর নিজিস্ব তথভান্ডার হতে পারে তেমনি পুরো একটি সেন্ট্রাল তথ্য ভান্ডার ও থাকে যেখানে সম্পুর্ন একটি দেশ এর বিভিন্ন রিসার্চ থেকে প্রাপ্ত তথ্য জমা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় মলিউকিউলার বায়োলজি ল্যাবরটরী নিউক্লিওটাইড সিকোয়েন্স ডাটাবেজ ( EMBL- BANK), ডিএনএ ডাটাব্যাংক অব জাপান (DDBJ), যুক্তরাষ্ট্রের জেন-ব্যাংক অব ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন (NCBI) ইত্যাদি হলো ন্যাশনাল কিছু তথ্যভান্ডার। তাছাড়াও সহজভাবে তথ্য খোজার জন্য অনলাইনভিত্তিক ব্রাওজার রয়েছে। আবার এই সকল ন্যাশনাল তথ্যভান্ডার একত্রিত হয়ে ওয়ার্ল্ডওয়াড প্রোটিন ডাটা ব্যাংক (wwPDB), প্রোটিন ডাটা ব্যাংক ইউরোপ( PDBe), জাপানের ওসাকা ইউনিভার্সিটির প্রোটিন ডাটা ব্যাংক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য তথ্যভান্ডার রয়েছে যা পৃথিবীর যেকোন রিসার্চার এর জন্য উন্মুক্ত।
বায়োইনফরমেটিক্সে এর লক্ষ
বায়োইনফরমেটিক্স জীববিজ্ঞান এর একটি শাখা যা জীববিজ্ঞান এর উন্নতিকরিনে কাজ করে। এই উন্নতিকরন বলা যত সহজ তা বুঝিয়ে বলা ততটাও সহজ নয়। জৈবতত্তকে বিজ্ঞান এর কঠিন শাখাগুলোর একটি বলা চলে। সেই শাখার উন্নতিকরনে যেমন কঠিন সব তথ্য বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন তেমনি এই কাজগুলো করতে দক্ষ জনবলও প্রয়োজন। কিন্ত বায়োইনফরমেটিক্সের প্রধান উদ্দেশ্য মূলত এই জায়গায়ই লুকিয়ে আছে। জীববিজ্ঞান এর আনুসাঙ্গিক উন্নতি এই বায়োইনফরমেটিক্সের মূল লক্ষ। একটু বিস্তারিত বলা যাক। মানবদেহের জিনোম সিকোয়েন্সিং করার জন্য কিছু ধাপে কাজ করতে হয়। কিন্ত কম্পিউটার এর বিভিন্ন এলগরিদম ব্যাবহার করেও এই জিনোম সিকোয়েন্সিং করা যায়। বিভিন্ন জিনোম এর সিকোয়েন্সে মিল ও অমিল খুজে পাওয়া যায়। এই কাজগুলো কম্পিউটার করতে পারে। তবে এই কাজ করার ধরন এবং গতির উন্নতিকরন বায়োইনফরমেটিক্সের প্রধান লক্ষগুলোর মধ্যে একটি।
তাছাড়াও সিকোয়েন্সের বড় সকল তথ্যকে সহজ ও সামারি আকারে গুছিয়ে আনাও সম্ভব এই কম্পিউটার এলগরিদম এর মাধ্যমে যা বায়োইনফরমেটিক্সের একটি অবদান। তাছাড়াও বায়োইনফরমেটিক্স এর আরেকটি লক্ষ, এক্সপেরিমেন্ট এর মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত কে ব্যাবহার করে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল এর একটি ধারনা তৈরি করা যাতে করে ধারনাকৃত ফলাফল এর কথা মাথায় রেখে আগাম সতর্কতা ও সে অনুযায়ী ব্যাবস্থা নেয়া। যেমন অ্যামিনো এসিডের প্রোটিন সিকোয়েন্সর আগেই অন্যান্য রিসার্চে ব্যাবহৃত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সেই পরিক্ষা নিয়ে আগাম ধারনা করা সম্ভব হয়। তাছাড়াও কোন একটি পরীক্ষা যখন করা হয় তখন একটি লক্ষ থাকে, এই লক্ষে আদৈ পৌছানো সম্ভব কিনা তা জানা যায় বায়োইনফরমেটিক্সের মাধ্যমে। মূলত বায়োইনফরমেটিক্সকে ব্যাবহার করার মাধ্যমে রিসার্চকে সহজ করা সম্ভব হয়েছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময়কাল কমে এসেছে আবার সাথে করে খরচও কমে এসেছে যা অর্থনৈতিকভাবেও সুবিধা প্রদান করে থাকে।
বায়োইনফরমেটিক্সে ব্যাবহৃত সফটওয়্যার ও প্রোগ্রাম
১৯৮০ সালের পর থেকে বায়োইনফরমেটিক্সকে জীববিজ্ঞান এর সাথে ওতপ্রতভাবে জড়িত একটি শাখা হিসেবে গন্য করা শুরু হয় যার ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন সফটওয়্যার ও কম্পিউটার প্রোগ্রামের উন্নতিকরন শুরু হয়। তখন থেকেই বায়োইনফরমেটিক্স এর গবেষণার জন্য বিভিন্ন ওপেন সোর্স সফটওয়্যার প্রকাশ করা হতে থাকে যা বিনামূল্যে পাওয়া যায়। যেহেতু সফটওয়্যার গুলো ওপেনসোর্স তাই এগুলো ব্যাবহারে সকলেই একে অপরের করা কাজের তথ্য সহজেই ব্যাবহার করতে পারে। এ ধরনের কয়েকটি সফটওয়্যার যেমন; Bioconductor, BioPerl, Biopython, BioJava, BioJS, BioRuby, Bioclipse, EMBOSS, Orange। তাছাড়াও বায়োইনফরমেটিক্সের জন্য অনেগুলো ওয়েবসার্ভিসও রয়েছে। এগুলো কম্পিউটার এর এলগরিদম ব্যাবহার করে প্রয়োজন তথ্য বিভিন্ন সার্ভার থেকে খুজে নিতে পারে। তাছাড়া পুরো পৃথিবীতেই এর ব্যাবহারকারী ছড়িয়ে থাকায় সার্ভার গুলো সমৃদ্ধ হয়ে থাকে এবং এতে করে কোন একক ব্যাবহারকারীকে এই ওয়েবসাইট গুলোর রক্ষনাবেক্ষনে সময় দিতে হয় না।
বায়োইনফরমেটিক্স এবং এর ভবিষ্যত
বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ পৃথিবী প্রযুক্তির বেরাজালে আবদ্ধ। আমরা চাইলেও প্রযুক্তির স্পর্শ ছাড়া একটি দিন কাটানো সম্ভব নয়। সময় যত আগাচ্ছে পৃথিবী গতিশীল হচ্ছে। সময় বাচানো এবং বেচে যাওয়া সময়ে আরো বেশি কিছু কাজ করাই এখন মোক্ষ। জীববিজ্ঞান শাখার বিভিন্ন কাজে সময়ের প্রয়োজন হয়। যেমন কোন একটি গাছের ফলন বৃদ্ধি করতে চাইলে একে নিয়ে বিস্তর গবেষণা প্রয়োজন। এতে মাস বা বছর ও পার হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে পৃথিবীর কোন না কোন প্রান্তে হয়তো অন্য কেউ ঐ একই গাছ নিয়ে কোন গবেষণা করেছে যা এখনকার গবেষণাতেও প্রয়োজন। এক্ষত্রে বায়োইনফরমেটিক্স এর ফলে তথ্য গুলো পাওয়া যেমন সম্ভব তেমনি সেই তথ্য এবং এখনকার তথ্যের সমন্বয় করে একটি আগাম ধারনা সম্ভব। ফলে গবেষণার সময়ও কমে আসবে।
তাছাড়াও বায়োইনফরমেটিক্স যেহেতু তুলনামূলক কঠিন তথ্য উপাত্ত নিয়ে কাজ করাকে সহস করার জন্য ব্যাবহার হয় তাই এই কাজের আরো উন্নতিকরনের জন্য প্রতিনিয়তই নতুন এবং দক্ষ প্রোগ্রামার বা সফটওয়্যার এর ব্যাপারগুলোতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে এমন জনবলের প্রয়োজন বাড়ছে। ফলে কর্মক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে এবং এই সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। এআই এবং মেশিন লার্নিং এখনকার সময়ে একটি অতি পরিচিত ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। বায়োইনফরমেটিক্সও যাতে যথাসম্ভব নিজেই কাজগুলোকে গুছিয়ে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করতে পারে তাই এআই এর সুবিধা নেয়া হচ্ছে। হয়তো সময়ের সাথে সাথে দেখা যাবে জনসাধারণের জন্যও বায়োইনফরমেটিক্সকে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে!
Share
More Blog Articles
Mar 04, 2024
রোবট এবং রোবটিক্স : বিস্ময়কর এক যান্ত্রিক রাজ্য
রোবটিক্স যদিও একটি শব্দ, কিন্ত কখনো কি চিন্তা করেছেন ছোট একটি শব্দে কত বিশাল একটি যান্ত্রিক পৃথিবী লুকিয়ে আছে! রোবটিক্স শব্দটি শোনলেই আমাদের মনের ভেতর একটা অন্য রকম অনুভূতি তৈরি হয়।
READ MORE
Mar 03, 2024
মডেম এর আদ্যোপান্ত
মডেম এর প্রধান কাজ তথ্য কে ডিজিটাল ও এনালগ সিগনাল এ রুপান্তর করা। এরা একই সাথে মডুলেশন এবং ডিমডুলেশন করতে পারে। মডেম মূলত একই সাথে বিভিন্ন চ্যানেল এ যুক্ত ডিভাইস সমূহে তথ্য প্রেরন করতে পারে।
READ MORE
Mar 05, 2024
ডায়োড : ডিজিটাল প্রযুক্তির ভিত্তি
ডায়োড মূলত ছোট আকারের বৈদ্যুতিক একটি যন্ত্র। এদের ব্যাবহার করা হয় বিপরীতমুখী তড়িৎ প্রবাহ রোধ এর জন্য। ডায়োড এর একপ্রান্ত নিম্ন রোধ ও অন্য প্রান্ত উচ্চ রোধ বিশিষ্ট হয়।
READ MORE