কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কী
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলতে বুঝানো হয় যন্ত্রের এমন ব্যাবহার ধরন যেখানে যন্ত্র মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে অনুসরন করে এবং মানুষের মতো নিজেই পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে সমস্যা চিন্হিত করে সেই সমস্যার সমাধান করতে পারে। যেহেতু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি শাখা তাই মেশিন লার্নিং এবং ডিপ লার্নিং এর সাথেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মিল রয়েছে।
Tanvir Hossain
Writer
PUBLISHED ONMar 16, 2024
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নিজেই নিজের এলগরিদমের উন্নতিকরন এবং কিছুক্ষেত্রে মানুষের থেকেও নিখুতভাবে সমস্যা সমাধান করতে পারার জন্য মেশিন লার্নিং এবং ডিপ লার্নিং এর সমন্বয় প্রয়োজন হয়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রকারভেদ
বর্তমানে বিভিন্ন কাজে, বিভিন্ন স্থানভেদে ভিন্ন বৈশিষ্টসমপন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাব্যাবস্থা ব্যাবহার করা হচ্ছে। তবে এই সকল ধরনের ব্যাবহার্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে প্রধান চারটি ভাগে ভাগ করা যায়।
- রিয়েক্টিভ ম্যাশিনঃ এই ধরনের সিস্টেমে কোন ম্যামোরি থাকে না এবং কাজ করার ধরন কোন একটি গন্ডিতেই সীমাবদ্ধ। যেমন ডিপ ব্লু (DEEP BLUE) আইবিএম এর তৈরি একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রোগ্রাম যা দাবা খেলতে পারতো। কিন্ত যেহেতু এতে কোন ম্যামোরি নেই তাই আগে কখনো দাবা খেলার কোন তথ্য সংরক্ষণ থাকতো না।
- লিমিটেড ম্যামোরিঃ এ ধরনের প্রোগ্রাম করা সিস্টেমে ম্যামোরি থাকে ফলে এরা পূর্ব অভিজ্ঞতা মনে রাখতে পারে এবং সেই তথ্য ব্যাবহার করতে পারে ভবিষ্যৎ কাজের জন্য। সেল্ফ ড্রাইভিং গাড়িগুলো মূলত এ ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যাবহার করে।
- থিওরি অব মাইন্ডঃ Theory of Mind মূলত একটি সাইকোলজিক্যাল শব্দ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে এ ধরনের নামকরণ করা সিস্টেম আশেপাশের পরিবেশ এবং মানুষজনের আবেগকে বুঝতে পারে। আবার এই তথ্য গুলোকে ব্যাবহার করে নিজের মধ্যে বিশ্লেষণ করে মানুষের মতোই সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সে অনুযায়ী কাজ করতে পারে। ফলে এ ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন মেশিনগুলোকে অনেকসময় শিল্পক্ষেত্র গুলোয় মানুষের সাথে কাজ করতেও দেখা যায়।
- সেল্ফ অ্যাওয়ার্নেসডঃ এই ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন সিস্টেমে অনুভুতি থাকবে! যদিও এ ধরনের সিস্টেম এখনও আবিষ্কার হয়নি তবে এ ধরনের সিস্টেম নিয়ে কাজ চলমান।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কিভাবে কাজ করে?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার এর একটি যুগান্তকারী সমন্বয়। তবে সফটওয়্যার কে এই কাজের জন্য বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ সফটওয়্যার এর ভিত্তি। এক্ষেত্রে প্রোগ্রাম ডেভেলপারদের পচ্ছন্দের শীর্ষে আছে পাইথন, জাভা, সি++ ইত্যাদি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজগুলো। সাধারনত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অসংখ্য প্রোগ্রাম করা তথ্যের ভিত্তিতে কাজ করে। এ ধরনের সিস্টেম গুলোকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যাতে এরা নতুন নতুন অবস্থাকে ম্যামোরিতে রেখে সে অনুযায়ী ভবিষ্যতে কাজ করতে পারে৷ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কিভাবে কাজ করে তা নিচের ধাপগুলোয় ভাগ করা যেতে পারে।
ধাপ-১. তথ্য সংগ্রহঃ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন সিস্টেমকে এমনভাবে প্রোগ্রামিং করা হয় যাতে তাকে ইনপুট হিসেবে দেয়া যেকোন তথ্য-উপাত্ত মনে রাখতে পারে, সেই তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করতে পারে এবং গুছিয়ে নিয়ে নিজে ব্যাবহার করার জন্য সংরক্ষন করতে পারে। এই ব্যাপারকে বলা হয় এলগরিদম।
ধাপ-২. যুক্তিপ্রয়োগঃ প্রথম ধাপের এলগরিদম গুলোকে আবার বিভিন্ন সোর্স এর উপর ভিত্তি করে সঠিক এলগরিদম গুলোকে আউটপুট হিসেবে প্রদানের জন্য তৈরি করে রাখে।
ধাপ-৩. সেল্ফ কারেকশনঃ এই ধাপে ২য় ধাপে পাওয়া এলগরিদম গুলোকে নেজেদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনে সাজিয়ে রাখে এবং কোন ব্যাবহারকারীকে যখনই কোন তথ্য-উপাত্ত জানতে চায় তখন তা প্রদান করে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাবহার
প্রযুক্তির উন্নয়ন এর সাথে সাথে এর ব্যাবহারব বৃদ্ধি পেয়েছে। তেমনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাবহারও বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকাংশে। ফলে আমারা আমাদের দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাবহার করছি। তাছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রেও এর ব্যাবহার নিয়মিত হচ্ছে।
- অটোমেশনঃ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সমন্বয়ে অটোমেশন প্রযুক্তির কাজ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। উদাহরনসরূপ রোবোটিক প্রসেস অটোমেশন (RPA) বা এমন এক ধরনের সফটওয়্যার যার মাধমে একের পর এক ডাটা প্রসেস করা হয়ে থাকে একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে। কিন্ত যখন এর সাহায্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সমন্বয় করে কাজ করা হয় তখন RPA নিজে নিজে ম্যানুয়ালি যে পরিমান কাজ করতো তার থেকে বেশি কাজ করতে পারে।
- সেল্ফ ড্রাইভিং গাড়িঃ অটোনোমাস গাড়ি কম্পিউটার ভিশন, ভিডিও বা ছবি শনাক্তকরণ এবং ডিপ লার্নিং এর সমন্বয় করে তৈরি করা হয়। ফলে গাড়িতে কোন ড্রাইভার না থাকলে ঐ গাড়ি নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিরাপত্তার সাথে চলতে পারে।
- রোবটিক্সঃ রোবটের ডিজাইন, বাজারজাতকরণ এর মূল উদ্দেশ্য যাতে করে ঐ রোবট কোন একটি বা একাধিক কাজ নিজে নিজে আগে থেকে দেয়া নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করতে পারে। যেমন গাড়ি এসেম্বলি করার জন্য রোবট এক্কটি বহুল প্রচলিত যন্ত্র। এই কাজকে মানুষের থেকেও নিখুতভাবে রোবটকে করতে দেখা যায়, যা সম্ভব হয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সমন্বয় এর ফলেই।
- ছবি,ভিডিও বা লিখার সৃষ্টিকরনঃ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেহেতু তথ্য নিজের মধ্যে বিশ্লেষণ করতে পারে তাই সে ঐ তথ্য-উপাত্ত গুলোকে নিজের মধ্যে বিভিন্নভাবে ডিজাইন করতে পারে। যেমন কোন ব্যাবহারকারী নির্দেশ দিলে তা নিরিক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন উপাত্ত বিশ্লেষণ করে নিজের বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে কোন লিখা, ভিডিও বা ছবি বানিয়ে দিতে পারে।
- ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্টঃ এখনকার সময়ে অনেক ধরনের ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট দেখা যায় যারা কোন ব্যাক্তির সাথে কথাবার্তা চালাতে পারে। আবার চাইলে কোন তথ্য দিতে পারে, গান শোনাতে পারে। সহজভাবে বলতে ইন্টারঅ্যাকটিভ কনভারসেশন চালিয়ে যেতে পারে। যেমন সিরি, এলেক্সা ইত্যাদি। এরা মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ডিভাইস যারা বিভিন্ন ওপেন সোর্স প্লাটফর্ম থেকে তথ্য নিতে পারে আবার নিজের তথ্য ভান্ডারকেও সমৃদ্ধ করতে পারে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তার স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের জন্য সমাদৃত যা আমাদের জীবনমান এর উপরও প্রভাব ফেলছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যাবসায়ীক কাজে ব্যাবহার করা হচ্ছে যার ফলে আনুসাঙ্গিক কাজ নিজে নিজে ডিভাইস করে নিতে পারছে। এতে মানুষের যে কাজে সময় বেশি প্রয়োজন হতো তার সময় কমে আসছে, একই সময়ে বেশি কাস্টমার সার্ভিস পাচ্ছে। আবার প্রতারকদের হাত থেকেও নিখুতভাবে কোম্পানিকে রক্ষায় সাহায্য করছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষের থেকেও নিখুতভাবে কাজ সম্পাদন করতে পারছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। তাছাড়াও যেকোন ধরনের তথ্য-উপাত্তের উপর ভিত্তি করে যে কাজগুলো করা হয় যেমন ডাটা এনালাইসিস ধরনের কাজগুলো নিখুঁতভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা করতে পারছে।
স্বাস্থক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যাবহারের মাধমে একই সময়ে একাধিক রোগীকে সেবা দেয়া সম্বব হচ্ছে, তাদের উপর স্বাস্থ নজরদারির মাধমে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়াও ইন্টারেক্টিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট এবং চ্যাটবট স্বাস্থ সেবা বিষয়ক বিভিন্ন তথ প্রদান করেও মানুষদের সাহায্য করছে। শিক্ষাক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যাবহারে শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষক ছাড়াও নিজেদের প্রয়োজনীয় নিখুত তথ্য জানতে পারছে। শিক্ষকরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যাবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজ অটোমেশন সিস্টেমে পরিক্ষা করতে পারছে ফলে ঐ সময় বাচিয়ে অন্য কোন কাজেও মনোনিবেশ করতে পারছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অসুবিধাসমূহ
যদিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনেক সুবিধা রয়েছে, তবে এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রথমই আসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারনে মানুষের কাজ হারানোর ব্যাপারটি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্রুত এবং নিখুত কাজ মানুষের থেকেও কম সময়ে করতে পারে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মানুষের বদলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাবহার বৃদ্ধি করছে। আবার অন্যদিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংযোজন এর জন্য দক্ষ এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন জনবল প্রয়োজন। এতে খরচও অনেক বেশি হয়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ভবিষ্যৎ পৃথিবী
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স এখন প্রায় সকলের হাতের নাগালেই।এর অসংখ্য সুবিধা আমরা ভোগ করছি। সময়ের সাথে সাথে এর ব্যাবহার এবং ব্যাবহারসীমা পরিবর্তিত হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভুলোশনে আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট গুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাবহার বারাচ্ছে। ফলে কাজের ধরন আরো নিখুত হচ্ছে। আবার এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন সিস্টেম তৈরিতে জনবল প্রয়োজন। এতে করে কর্মক্ষেত্র বৃদ্ধি পাচ্ছে। তথ্য-উপাত্ত এর সংমিশ্রণে সকল ক্ষেত্রেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তা ক্রমবর্ধমান।
সবশেষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ডিজিটাল পৃথিবীর একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। তবে এর ব্যাবহার এর ধরন এর উপর নির্ভর করে আউটপুট কেমন হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের তৈরি প্রোগ্রাম এবং মানুষের তৈরি বিভিন্ন সোর্স থেকে তথ্য নিয়েই সে কাজ করে। এক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক অনেককিছুই আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স শনাক্ত করতে পারে এবং ব্যাবহার করে। মানুষ এই সিস্টেমকে যেভাবে ব্যাবহার করবে এবং যেভাবে শিখাবে সেভাবেই AI বা আর্টিফিসিলাম ইন্টিলিজেন্স কাজ করবে। তাই মানুষের ইনপুট দেয়ার ধরন বা ব্যাবহারের ধরনের উপর নির্ভর করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যত।
Share
More Blog Articles
Mar 04, 2024
রোবট এবং রোবটিক্স : বিস্ময়কর এক যান্ত্রিক রাজ্য
রোবটিক্স যদিও একটি শব্দ, কিন্ত কখনো কি চিন্তা করেছেন ছোট একটি শব্দে কত বিশাল একটি যান্ত্রিক পৃথিবী লুকিয়ে আছে! রোবটিক্স শব্দটি শোনলেই আমাদের মনের ভেতর একটা অন্য রকম অনুভূতি তৈরি হয়।
READ MORE
Mar 03, 2024
মডেম এর আদ্যোপান্ত
মডেম এর প্রধান কাজ তথ্য কে ডিজিটাল ও এনালগ সিগনাল এ রুপান্তর করা। এরা একই সাথে মডুলেশন এবং ডিমডুলেশন করতে পারে। মডেম মূলত একই সাথে বিভিন্ন চ্যানেল এ যুক্ত ডিভাইস সমূহে তথ্য প্রেরন করতে পারে।
READ MORE
Mar 05, 2024
ডায়োড : ডিজিটাল প্রযুক্তির ভিত্তি
ডায়োড মূলত ছোট আকারের বৈদ্যুতিক একটি যন্ত্র। এদের ব্যাবহার করা হয় বিপরীতমুখী তড়িৎ প্রবাহ রোধ এর জন্য। ডায়োড এর একপ্রান্ত নিম্ন রোধ ও অন্য প্রান্ত উচ্চ রোধ বিশিষ্ট হয়।
READ MORE