
মাল্টিমিটার কি: দ্যা অলরাউন্ডার
মাল্টিমিটার এমন একটি যন্ত্র যার মাধ্যমে সহজে এবং নিখুঁতভাবে কোন একটি সার্কিট এর ভোল্টেজ, কারেন্ট, রোধ এবং অন্যান্য মাপঝোঁক করা যায়। মাল্টিমিটারকে ভোল্ট-ওহম মিটার ও বলা হয়ে থাকে।

Mejbahul Alam
Writer
PUBLISHED ONMar 07, 2024
যেকোন বৈদ্যুতিক সংযোগ এর আগে এর ভোল্টেজ, কারেন্ট মেপে নেয়া আবশ্যক। এতে করে বৈদ্যুতিক যন্ত্রে উৎস বা সোর্স থেকে বেশি তড়িৎ পরিবাহিত হওয়ার সুযোগ থাকে না। কিন্তু প্রতি সার্কিটেই কারেন্ট, ভোল্টেজ বা রোধ, এ সবগুলোই আলাদা হয় এবং এগুলোকে আলাদা যন্ত্রের মাধ্যমে মাপতে হয়। প্রতিটা কাজের জন্য আলাদা যন্ত্র না থেকে যদি একটি মাত্র মাপনী যন্ত্র থাকে তবে কাজগুলো সহজ হয়। এধরনের কাজগুলোকে সহজিকরণ এর ধারনা থেকেই আসে মাল্টিমিটার এর ধারনা।
মাল্টিমিটার কি?
এমন একটি যন্ত্র যার মাধ্যমে সহজে এবং নিখুঁতভাবে কোন একটি সার্কিট এর ভোল্টেজ, কারেন্ট, রোধ এবং অন্যান্য মাপঝোঁক করা যায়। মাল্টিমিটারকে ভোল্ট-ওহম মিটার ও বলা হয়ে থাকে।
মাল্টিমিটার এর প্রকারভেদ
মাল্টি মিটার দুই প্রকার, ১. ডিজিটাল মাল্টিমিটার, ২. এনালগ মাল্টিমিটার। এদের ব্যাবহার ক্ষেত্র জদিও একই রকম কিন্ত এদের ব্যাবহার করার ধরন ভিন্ন। একটু বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
ডিজিটাল মাল্টিমিটার
ডিজিটাল মাল্টিমিটার এর একটি আলাদা বৈশিষ্ট হলো এর ডিজিটাল ডিস্প্লে। ডিস্প্লে তে মাপতে চাওয়া ভোল্টেজ, কারেন্ট বা রোধ দেখায় যা স্পষ্ট এবং সঠিকভাবে বুঝা যায়।
ছবি: একটি ডিজিটাল মাল্টিমিটার
ডিজিটাল মাল্টিমিটার এর সুবিধা
ডিজিটাল মাটিমিটার মূলত নিখুঁত মাপনী ক্ষমতার জন্য সমাদৃত। ডিরেবিলিটি ও রিলায়বেলটি এর জন্য ডিজিটাল মাল্টিমিটার ব্যাবহার করতে সুবিধা হয়। তাছাড়া ডিজিটাল মাল্টিমিটার তুলনামূলক বেশি ক্ষমতার ইনপুট নিতে পারে। ফলে যেকোন ধরনের সার্কিট এর মাপঝোঁক করা সহজ হয় এবং সার্কিট এর ক্ষতি হওয়া রক্ষা করা যায়।
ডিজিটাল মাল্টিমিটার এর অসুবিধা
যদিও ডিজিটাল মাল্টিমিটার এর সুবিধা অনেক বেশি, তবে এর কিছু অসুবিধা ও রয়েছে। যেমন ডিজিটাল মাল্টিমিটার দিয়ে যেকোন মাপঝোঁক এর সময় সময় বেশি প্রয়োজন হয়। তাছাড়া সার্কিট এর ফ্রিকোয়েন্সী এ ধরনের মাল্টিমিটার এর ডিস্প্লে ভ্যালুতে প্রভাব ফেলে।
এনালগ মাল্টিমিটার
দাম তুলনামূলকভাবে কম এবং বাকি সব কাজ প্রায় ডিজিটাল মাল্টিমিটার এর মতো নিখুঁতভাবে করতে পারার জন্য এনালগ মাল্টিমিটার পরিচিত। এনালগ মাল্টিমিটার এ কোন ডিস্প্লে থাকে না, কিন্ত এতে একটি ঘরির কাটার মতো কাটা থাকে এবং তা মাপজোখ নির্দেশ করে।
ছবি: একটি এনালগ মাল্টিমিটার
এনালগ মাল্টিমিটার এর সুবিধা
এ ধরনের মাল্টিমিটার যেকোন ধরনের মাপজোখ এর সময় অনবরত রিডিং দিতে পারে। কোন সার্কিট এর কারেন্ট বা ভোল্টেজ মাপার জন্য বাইরে থেকে মাল্টিমিটার এ পাওয়ার দেয়ার প্রয়োজন হয় না এবং এনালগ মাল্টিমিটার এর মূল্য ডিজিটাল মাল্টিমিটার থেকে তুলনামূলক কম।
এনালগ মাল্টিমিটার এর অসুবিধা
এনালগ মাল্টিমিটার আকারে বড় হওয়ায় বহন করা একটু অসুবিধাজনক। মাপঝোঁক নিখুঁত না হওয়া প্রধান একটি সমস্যা। যেহেতু ঘরির কাটার মতো নিডল দিয়ে সংখ্যা নির্দেশ করে তাই মাঝে মাঝে বুঝতে অসুবিধা হয়। তাছাড়া এ ধরনের মাল্টিমিটার এর যত্ন বেশি করা প্রয়োজন হয়।
মাল্টিমিটার ব্যাবহার এর নিয়ম
যেহেতু মাল্টিমিটার দিয়ে ভোল্টেজ, কারেন্ট, রোধ মাপা যায় তাই প্রত্যেক কাজের জন্যই আলাদাভাবে মাল্টিমিটার ইউজ করতে হয়। আবার মাল্টিমিটার এনালগ হউক বা ডিজিটাল, এদের সাহায্য ভোল্টেজ, কারেন্ট বা রোধ পরিমাপ করার জন্য নিয়ম একই রকমের। এখানে আমরা ভোল্টেজ, কারেন্ট, রোধ পরিমাপ এর জন্য ডিজিটাল মাল্টিমিটার কে উদাহরন হিসেবে ব্যাবহার করছি।
ভোল্টেজ পরিমাপ
যেকোন সোর্স এর ভোল্টেজ নির্দেশ করে এর নেগেটিভ এবং পজেটিভ প্রান্তের মধ্যে পটেনশিয়াল ডিফারেন্স। তবে ভোল্টমিটার বা মাল্টিমিটার দিয়ে কোন সোর্স এর ভোল্টেজ মাপার আগে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, মাল্টিমিটার এর দুটি প্রব যাতে সোর্স এর সাথে প্যারালাল এ কানেট করা হয়। সোর্স এর পজেটিভ প্রান্ত মাল্টিমিটার এর পজেটিভ ও সোর্স এর নেগেটিভ প্রান্ত নভ এর নেগেটিভ প্রান্তের সাথে যুক্ত করতে হবে। নিচে ছবিতে একটি উদাহরন দেয়া আছে।
ছবি: মাল্টিমিটার দিয়ে ভোল্টেজ পরিমাপ
মাল্টিমিটার দিয়ে কারেন্ট পরিমাপ
ভোল্টেজ পরিমাপ এর সময় যেমন প্যারালাল সংযোগ দেয়া আবশ্যক, তেমনি কারেন্ট পরিমাপ এর সময় যে অংশ বা ইকুইপমেন্ট এর কারেন্ট মাপা হবে তার সাথে মাল্টিমিটার সিরিজে সংযোগ দিতে হবে। নয়তো মাল্টিমিটার এর ফিউজ পুড়ে যেতে পারে। আমরা উদাহরন এর সুবিধার্থে একটি রোধ কে কোন ইকুইপমেন্ট ধরতে পারি।
ছবি: মাল্টিমিটার দিয়ে রোধ এর মধ্যে দিয়ে চলাচল্রত কারেন্ট এর পরিমাপ।
রেসিস্টেন্স বা রোধ পরিমাপ
আমরা আমাদের একাডেমিক শিক্ষা বা নিজে থেকে শিখার জন্য কোন বৈদ্যুতিক যন্ত্রের জায়গায় রোধকে ধরে নিই, এবং রোধ এর মধ্যে দিয়ে ভোল্টেজ বা কারেন্ট পরিমাপ করি সাধারনত। কিন্ত এই রোধ বা রেসিস্টেন্স ভ্যালু পরিমাপ করা প্রয়োজন হয়। এই কাজটি ও মাল্টিমিটার দিয়ে করা যায়। শুধুমাত্র কোন রেসিস্টেন্স এর দুই পাশে মাল্টিমিটার এর প্রব দুটি সংযোগ দিলেই রোধ এর পরিমান পরিমাপ করা যায়।
ছবি: মাল্টিমিটার দিয়ে রোধ পরিমাপ
তাছাড়া বিভিন্ন কাজের অবস্থার উপর ভিত্তি করে কোন সার্কিট এর একটি নির্দিষ্ট অংশের রোধ, ভোল্টেজ, কারেন্ট পরিমাপ এর জন্য মাল্টিমিটার এর ব্যাবহার এর ধরন কিছুটা পরিবর্তন হয়।
মাল্টিমিটার কতটুকু নিখুত?
আমরা আগেই জেনেছি মাল্টিমিটার দিয়ে প্রয়োজনীয় মাপজোখ করা হয় যাতে বৈদ্যুতিক যন্ত্রের কোন ক্ষতি না হয়। কিন্ত মাল্টিমিটার কি পরিমান নিখুত ভাবে রিডিং দেয়? এই প্রশ্নের উত্তর ডিজিটাল এবং এনালগ মাল্টিমিটার এর জন্য আলাদা। এনালগ মাল্টিমিটার প্রায় + - ৩% সঠিক হয়, অন্যদিকে ডিজিটাল মাল্টিটার এর অ্যাকুরেসি রেট +-০.০৫%।
বাংলাদেশ এ মাল্টিমিটার এর দাম কত?
মাল্টিমিটার এর ধরন এর উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন মুল্যের মাল্টিমিটার কিনতে পাওয়া যায়। তবে সাধারন কাজে ব্যাবহার এর জন্য ১০০০-১৫০০ টাকার মধ্যে মুটামুটি ভালো মানের মাল্টিমিটার কিনতে পাওয়া যায়। যেহেতু ডিজিটাল মাল্টিমিটার এর সুবিধা বেশি তাই ডিজিটাল মাল্টিমিটার এখন সহজলভ্য।
Share